স্বল্প পুঁজিতে ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় এমন কাজগুলোর অন্যতম মাছ চাষ। আবহমান কাল থেকে
বাঙালির আমিষের চাহিদা পূরণে মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের কৃষির একটি বড় অংশ
দখল করে আছে মাছ চাষ। আর এই মাছ চাষে চাষিদের পাশে থেকে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সেবা দিচ্ছে
‘বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতাল’। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় ১
কোটি ৮০ লাখ মানুষ এখন মাছ চাষ এবং এ সম্পর্কিত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মোট দেশজ উৎপাদনে
(জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান এখন চার শতাংশ। বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে।
পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে মোট উৎপাদন বেড়েছে ছয় গুণ।
এই মাছ চাষিদের আধুনিক কলাকৌশল, সঠিক নির্দেশনা দেওয়া, মাছের রোগ বালাই নিরসন, মাছের
মড়ক দেখা দিলে তার কারণ শনাক্ত করে সমাধান দেওয়াসহ মাছ চাষ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য দিয়ে
সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতাল। বর্তমানে পুকুর, নদী, খাল, বিল, হাওড়-বাওড়সহ
বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ চাষ হয় এমনকি ঘরের ছাদে বা ঘেরা জায়গায় বায়োফ্লক, হাই-ডেনসিটি এবং আর
এ এস পদ্ধতিতে মাছ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অভিজ্ঞতার অভাব, রোগবালাই এবং সঠিক দিক নির্দেশনা সম্পর্কে না জানা,
প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে মাছ চাষিদের অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ফলে
উৎপাদন কমে যায়।’

বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতালের কার্যক্রম।
মাছের সঠিক উৎপাদন এবং মাছ চাষিদের অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে
বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতাল সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা
এবং চেয়ারম্যান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদ রানা। উপদেষ্টা
হিসেবে রয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পর্কে মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী
জনকল্যাণমূলক সংগঠন। দেশের পাঁচটি বিভাগে আমাদের কার্যক্রম চলমান। উপজেলা ও ইউনিয়ন
পর্যায়ে আমাদের সার্ভিস বুথ ও প্রতিনিধি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে আমরা পুরো বাংলাদেশে এই সেবা
ছড়িয়ে দিতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাষিদের মাছ চাষের কলাকৌশল, রোগ নিরাময়ের পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে
প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমাদের উপজেলা প্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে মাছ চাষিদের পুকুর ও জলাশয়ের
পানি পরীক্ষা করে আধুনিক চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করেন। বায়োফ্লক, হাইডেনসিটি, আরএএস
সহ যাবতীয় আধুনিক মাছ চাষ বিষয়ে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করি। সামাজিক
যোগাযোগ ও হটলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে চাষিদের ২৪ঘণ্টা সেবা চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতালের সার্ভিস বুথ।
তিনি আরো বলেন, ‘মাছের রোগ নির্ণয় ও নিরাময় সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা পরিচালনা, মৎস্য ঔষধ উৎপাদনকারী সংস্থা ও বিভিন্ন সামাজিক
সংগঠনের সহায়তায় ক্ষুদ্র দুঃস্থ মাছ চাষিদের মধ্যে মাছের পোনা বিতরণ করা হয়। মাছ চাষিদের
মেধাবী সন্তানদের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির ব্যবস্থা করা
হয়।’মৎস্য হাসপাতাল থেকে সেবা পাওয়া একাধিক মাছ চাষিরা বলেন, ‘আমরা যেকোনো সমস্যায়
মৎস্য হাসপাতালের প্রতিনিধিদের পাশে পাই। তারা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সাহায্য
করে। মাছের রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেয়। ফলে আমাদের ভোগান্তি অনেক অংশে কমছে।’
বর্তমানে রাজশাহী বিভাগ (নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট), ঢাকা বিভাগ (গাজীপুর, মানিকগঞ্জ),
ময়মনসিংহ বিভাগ (ময়মনসিংহ সদর, নেত্রকোনা, জামালপুর), রংপুর বিভাগ (রংপুর সদর, দিনাজপুর)
এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ৬৮টি সার্ভিস বুথ চালু রয়েছে। সরকারি-
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসলে বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতাল তাদের কার্যক্রমের পরিধি
আরো বাড়াতে পারবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।